আজ আমি আপনাদের দার্জিলিং নিয়ে যাবো। এই ট্রাভেল প্লানে ঘুরলে মোটামুটি কম খরচের মধ্যেই পুরো দার্জিলিং বেড়ানো হয়ে যাবে।
4 রাত্রি 5 দিনের একটি ট্রাভেল ডিটেইলস নিয়ে আজকের আলোচনা শুরু করছি।
পেসক/তিনচুলে - 2 রাত্রি এবং দার্জিলিং: 2 রাত্রি।
ট্রাভেল ডিটেইলস:
#প্রথম_দিন:
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা শিলিগুড়ি থেকে ব্রেকফাস্ট করে রওনা দেবেন পেসক এর উদ্দেশ্যে। NJP থেকে পেসকের দূরত্ব প্রায় 65 কিমি আর গাড়িতে সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা মত। পেসক বা তিনচুলে যেখানেই থাকুন, হোমস্টেতে পৌঁছে ফ্রেস হয়ে লাঞ্চ সেরে নিন। এরপর দুপুরের মিঠে রোদ গায়ে মেখে একটু হেঁটে হেঁটেই ঘুরে নিন আশে পাশের এলাকা, কথা বলুন স্থানীয় মানুষগুলির সাথে। আবহাওয়া ভালো থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে ঢলে পরা রক্তিম সূর্যের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করে নিন। সেই আলোর বিচ্ছুরণ মেঘের সাথে মিশে গিয়ে এক অপূর্ব গোধূলি আপনাকে স্বাগত জানাবে। সন্ধ্যে একটু ঘনিয়ে এলেই হাতে গরম চা নিয়ে বসে পড়ুন আড্ডা দিতে। সুখ দুঃখের কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যে পাড় হয়ে রাত্রি হয়ে যাবে আপনি বুঝতেই পারবেন না। রাত্রি 8:00-9:00 টার মধ্যে ডিনার সেরে একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন। আসলে আগের রাতের ট্রেন জার্নি এবং সারাদিনের ধকল যা হবে তাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া খুবই জরুরী।
|
|
#দ্বিতীয়_দিন:
ভোর বেলায় পাখির কলতানে ঘুম ভেঙে যাবে, একটু ঠান্ডা থাকায় বিছানা ছেড়ে উঠতে মন যাবে না, তাই বিছানা থেকেই দেখে নিন কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে সূর্যোদয়। চা এর কাপ হাতে নিয়ে একটু মর্নিং ওয়াক করতে করতে সকালটা কাটাতে পারেন সুন্দর প্রকৃতির মাঝে, দেখবেন মনের সব গ্লানি, এতদিনের কাজের চাপ, মানসিক অবসাদ সব দূর হয়ে যাবে। এরপর ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন।
ব্রেকফাস্ট করেই আজ গাড়ি নিয়ে কালিমপং ও তার আশে পাশের সব দর্শনীয় স্থানগুলি ভ্রমণ করে নিতে হবে। এবারে বলি এইদিন আপনারা কি কি দেখবেন? ক্যাকটাস গার্ডেন, ডুরপিন মোনাস্ট্রি, মরগ্যান হাউস, গলফ কোর্স, ডেলো হিল, সায়েন্স সেন্টার, হনুমান টক, মঙ্গল ধাম, কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট ইত্যাদি।
|
|
তবে বেশ কয়েকটি স্পট দেখে আপনারা চাইলে দুপুরে তিস্তা নদীর ধারে বসে লাঞ্চ করে নিতে পারেন অথবা কাছের কোনো রেস্টুরেন্টেও খেয়ে নিতে পারেন। নীলাভ সবুজ তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর মিলন স্থলে (ত্রিবেণী) পিকনিকের মেজাজে লাঞ্চ করতে পারলে সেটা হবে অবশ্যই চির-স্মরণীয়। খাওয়ার পর বাকি স্পট দেখে ফিরে আসুন আবার হোমস্টের প্রাঙ্গনে। সন্ধ্যে বেলায় আবার হাতে গরম চা নিয়ে চলতে পারে আড্ডা, গান। হোমস্টেকে আগের দিন বলে রাখলে এইদিন সন্ধ্যায় বন-ফায়ার ও বারবিকিউ এর ব্যবস্থাও করে দেবেন , তবে এর জন্যে হোমস্টেকে অতিরিক্ত কিছু টাকা দিতে হবে। এই দিনের রাত্রিবাসও পেসকে বা তিনচুলেতে।
#তৃতীয়_দিন:
আগের দিন কালিমপঙ এর দিকটাই লোকাল সাইট সিয়িং করেছেন তাই আজ আপনারা দেখবেন দার্জিলিং এর অফবিট জায়গাগুলি। ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন তাকদা, তিনচুলে, লামহাট্টা, লাভার্স মিট ভিউ পয়েন্ট, বড় মাংওয়া, ছোট মাংওয়া এইসব জায়গাগুলোতে। লামহাট্টা পার্ক সত্যিই মন মুগ্ধকর, এইখানেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটাবেন। এইসব দেখতে দেখতেই মাঝে একসময় লাঞ্চ সেরে সোজা চলে যান দার্জিলিংয়ে, পেসক থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব 25 কিমি আর সময় লাগবে 1 ঘন্টা 15 মিনিট মত। দার্জিলিং পৌঁছে হাতে সময় থাকলে সন্ধ্যেটা কাটান দার্জিলিং ম্যালে। যদি সময় নাও থাকে কোনো চিন্তা নেই, পরের দিনও তো দার্জিলিংয়েই থাকছেন, তাই ম্যাল রোড মিস হবে না। এইদিন রাত্রিবাস দার্জিলিং শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোনো এক হোটেলে।
#চতুর্থ_দিন:
খুব ভোর বেলায় (ভোর 4:30 নাগাদ) যাবেন দার্জিলিং এর সবচেয়ে বিখ্যাত টাইগার হিল ভিউ পয়েন্টে। ফেরার পথে দেখে নেবেন বাতাসিয়া লুপ ও ঘুম মনেস্ট্রি। এরপর হোটেলে ফিরে ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। তারপর আবার বেরিয়ে পড়ুন দার্জিলিং এর লোকাল সাইট সিয়িং এর বাকি জায়গাগুলি দেখার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে দেখবেন পদমজা নাইডু জুয়োলজিক্যাল পার্ক (Zoo), হিমালয়ান মাউন্টেনারিং ইনস্টিটিউট, রোপওয়ে (এখানে এন্ট্রি টিকিট আছে), তেনজিং রক, হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন, জাপানিজ পিস প্যাগোডা ইত্যাদি। এইসব দেখে একটু দেরি করেই লাঞ্চ করুন হোটেলে ফিরে অথবা বাইরের ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে। সন্ধ্যে বেলায় আবার চলে যান ম্যাল রোডে। কেউ চাইলে সন্ধ্যেটা কাটাতে পারেন উষ্ণ দার্জিলিং চা হাতে নিয়ে, বসতে পারেন Kaventer's বা Glenaries এর ওপেন টেরাসে (যদিও পিক সিজনে লাইনে দাঁড়াতে হবে)। বাড়ির জন্যে কিনে নিতে পারেন কেক, প্যাস্ট্রি বা কুকিজ। এছাড়া শীতবস্ত্র কেনার জন্যেও সময় থাকছেই। তাই যা কেনাকাটা করার আজই করুন। আজও রাত্রিবাস দার্জিলিংয়ে।
|
|
#পঞ্চম_দিন:
ব্রেকফাস্ট করে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে আসুন মিরিক লেকে। চাইলে মিরিক লেকে বোটিং করতে পারেন, এই জায়গায় অনেক রেস্টুরেন্ট আছে, আর খাবারও বেশ ভালো। ফেরার পথে এটাই লাঞ্চ করার বেস্ট জায়গা, এখানেই লাঞ্চ সেরে এগিয়ে যান গোপালধারা টি এস্টেটের দিকে, ওখানে আবার চা বাগানে ঢুকে একটু ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যের মধ্যে ফিরে আসুন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। ফেরার দিনে রাতের খাবার অনলাইনে অথবা স্টেশনের ফুড প্লাজা থেকে পার্সেল করে নেবেন। দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গের অফবিট জায়গার প্রায় অনেকটাই কভার হয়ে গেল। এই প্লান আশা করি সকলের কাজে আসবে, তাই প্রয়োজনে নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখুন। আর যাঁরা দার্জিলিং প্রিয় তাঁদেরকে ট্যাগ করে দিন।
|
|
তাহলে এবারে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন এই ট্রাভেল প্লানে। যেখানে একদিকে পাবেন দার্জিলিং এর অফবিট জায়গার আতিথিয়তা আবার অন্যদিকে থাকবে দার্জিলিং শহর ভ্রমণ। পাহাড়ি অফবিট জায়গায় গিয়ে স্থানীয় মানুষদের সাথে, তাঁদের মতো করে দুটি দিন অতিবাহিত করুন পেসক বা তিনচুলের কোনো একটি হোমস্টেতে আর দার্জিলিং-এ দুই দিন থাকবেন দার্জিলিংয়ের ম্যালের কাছের কোনো হোটেলে।
#যাবেন_কিভাবে:
এই ট্যুরে যাওয়া আসা ট্রেনে বা বাসে যেটাতে খুশি করতে পারেন। ট্রেনে স্লিপার ক্লাস, 3AC তে অথবা বাসে (ভলভো) সেমি-স্লিপারে যাতায়ত বেশ ভালো হবে। কলকাতা থেকে ট্রেন ও বাস সবই NJP ও শিলিগুড়ি এক রাতের জার্নি।
#খরচ:
4/6 জনের দল একসাথে এই ট্রাভেল প্লানে বেড়াতে গেলে জনপ্রতি 7-8 হাজার টাকা খরচ হবে। তবে পিক সিজনে হয়তো আরও হাজার টাকা জনপ্রতি বাড়তে পারে। আর কেনাকাটা যা করবেন সেটা তো আলাদাই।
|
|
"এই ট্রাভেল প্লানটি করার ক্ষেত্রে যদি কারোর কোনো রকম সাহায্যের প্রয়োজন হয়, যেমন ধরুন হোমস্টে ও হোটেল বুকিং, গাড়ি বুকিং বা অন্য কোনো তথ্য চাই, তাহলে আমার পরিচিত 3 জন ভালো ট্রাভেল এজেন্সির নাম্বার শেয়ার করলাম যোগাযোগ করতে পারেন। এরা সকলেই দায়িত্ব নিয়েই আপনার ট্যুর যাতে সুন্দর ও স্মরণীয় হয় সেটা চেষ্টা করবেন। আর ফোন করে বাঙালির বেড়ানো গ্রুপের নাম বলতে ভুলবেন না। বাঙালির বেড়ানো গ্রুপে ইনারা প্রত্যেকেই আছেন, সুতরাং আমাদের সদস্যদের জন্যে একটু স্পেশ্যাল কিছু পাবেন এটা বলতে পারি।"
0 comments:
Post a Comment